দেখে নিন মন ভালো করার ১০ টি উপায়

আমরা চিরদিন সুখে থাকতে পারিনা, কোনভাবে না কোনভাবে আমাদের জীবনে এক সময় দুঃখ-কষ্ট চলে আসে। আমরা দুঃখ কষ্টের ব্যথায় ব্যথিত হলে তখন আমাদের মন প্রচন্ডভাবে ভেঙে পড়ে এবং সব সময় মন খারাপ হয়ে থাকে।

আমাদের মধ্যেও অনেকেই রয়েছে যারা মন খারাপ হলে কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। অনেক সময় রাগের মধ্য ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে এবং সেই ভুল এক সময় জীবনের চরম ভুল বলে বিবেচিত হয়।

তাই আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলে আলোচনা করব কিভাবে প্রচন্ড মন খারাপ হলেও নিজেকে ভালো রাখবেন এবং মন ভেঙে পড়া থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন।

হঠাৎ মন খারাপ হয় কেন

বিভিন্ন কারণেই হঠাৎ মন খারাপ হয়ে থাকে তবে বেশিরভাগ সময় মানসিক চাপ ও পারিবারিক ভালবাসার অভাব ও অতীতের করা কোনো খারাপ কাজের অনুশোচনা থেকেই হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যায়।

আবার অনেকের নিজের পরিচিত লোকের সাথে অভিমানের কারণে মন খারাপ হয়ে যায় বা কোন এমন কাজ সংযত হয় যা সে কখনো কল্পনা করেনি। তবে বর্তমান সময়ে আমাদের হঠাৎ মন খারাপ হওয়া এই সমস্যাটি অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।

মন ভালো করার ১০ উপায়

বর্তমানে ইয়াং জেনারেশনের বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে প্রেম নিয়ে ব্যস্ত তাই প্রিয়জনের কাছ থেকে ছোট্ট একটি কথা থেকেই মনে আঘাত পেয়ে যায় এবং সেখান থেকে মন খারাপ হয়ে যায়। কিভাবে কঠিন সময়ে ও নিজের মনকে শান্ত রাখবেন এই বিষয়ে সেরা ১০ টি উপায় উল্লেখ করব যেগুলো আপনার মনকে ভালো রাখবে।

বই পড়ুন: বইকে বলা হয় জ্ঞানের সমুদ্র আর জ্ঞানের সমুদ্রে ডুবে থাকলে আমাদের মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। বলা হয়ে থাকে হাজার বন্ধুর চেয়ে একটি বই উত্তম আবার যদি বন্ধুর মতো ভালো বন্ধু হয় তাহলে হাজার বইয়ের চাইতে ওই বন্ধু উত্তম।

বই পড়ার মাধ্যমে শুধু সুন্দর সময়ই কাটে, এবং অনেক জ্ঞান অর্জনও করা যায়। তাই নিজের মনকে ফ্রেশ ও ভালো রাখতে গল্পের বই পড়ুন এবং বিভিন্ন সাহিত্যিক বই পড়ার মাধ্যমে নিজের সাহিত্যিক চিন্তা ধারণা ডেভলপ করুন।

নামাজ পড়ুন: মন খারাপের সবচেয়ে ভালো ওষুধ হল নামাজ। যদি আল্লাহর কাছ থেকে আপনার দূরত্ব অনেক বেশি হয়ে যায় তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঘন ঘন মন খারাপ হয়। আল্লাহ বিভিন্ন চিন্তা ও দুঃখ কষ্টের মাধ্যমে মানুষের চরিত্র ও ধৈর্যকে পরীক্ষা করে থাকেন।

তাই বিপদের সময় নিজেকে সংযত রেখে নামাজ পড়ার মাধ্যমে মনকে সতেজ রাখা এবং দুঃখ কষ্ট লাঘবের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়। সর্বশেষ বলতে চাই আপনি যদি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন তাহলে আপনার মন সবসময় খুশি মনে থাকবে কেননা নামাজের মধ্যেও শান্তি লুকিয়ে আছে।

নিজেকে সময় দিন: আমাদের মধ্যে অনেকেই কাজের জন্য নিজেকে একদম সময় দিতে পারি না। নিজের কাজ এবং অন্যান্য কাজ গুছিয়ে যদি নিজের জন্য একটু সময় বের করা যায় এবং সেই সময়টুকু ইনজয় করা যায় তাহলে নিজের মন এমনিতেই অনেক ভালো হয়ে যায়। মানুষ যখন অতিরিক্ত কাজ করে এবং তার প্রয়োজনের জন্য নিজের সুখটুকু বিলে দেয় তখন ঘন ঘন মন খারাপ হয়।

তাই কাজকে গুছিয়ে নিন এবং প্রয়োজনের চাইতে অতিরিক্ত কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। নিজের জন্য সময় বের করুন অথবা আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঘুরতে যেতে পারেন। অথবা আপনার পছন্দ এমন কিছু করে কিছুটা সময় অতিবাহিত করুন তাহলেই দেখবেন মন আবার শান্ত হয়ে গেছে।

খারাপ চিন্তা বাদ দিন: মানুষের মনের অস্থিরতা ও শরীর খারাপ হওয়ার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো খারাপ চিন্তা। আপনার মাথায় যদি সব সময় খারাপ চিন্তা ঘুরপাক খায় তাহলে আপনার মনে কখনোই শান্তি আসবে না। তাই নিজের মনকে শান্ত করতে হলে আগে খারাপ চিন্তা বাদ দিতে হবে এবং সব সময় পজিটিভ চিন্তা করতে হবে।

খারাপ চিন্তা করলে এবং মনের মধ্যেও কোন দ্বিধা থাকলে তাহলে আপনার শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ হবে। তাই খারাপ চিন্তা কে এড়িয়ে চলার জন্য আপনি নিয়মিত নামাজ পড়ুন।

ব্যায়াম করুন: বলা হয়ে থাকে সারা দিনের আবহাওয়ার থেকে সকালের আবহাওয়া সবচেয়ে ভালো। মন ভাল করার জন্য আপনি ভোর সকালের ব্যায়াম করতে পারেন। ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীর যেমন সুস্থতা থাকে তেমন মন সতেজ থাকে।

খুব বেশি মন খারাপ হলে আপনি তক্ষণাত ব্যায়াম করুন এবং সবসময় নিজেকে মেডিটেশনের মাধ্যমে ব্যস্ত রাখুন তাহলে দেখবেন মন এমনিতেই ভালো হয়ে গেছে।

খেলাধুলা করুন: আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের মন সবসময় ভালো থাকতো কারণ সারাদিন খেলাধুলা করতাম। নিজের ইচ্ছামত সময় কাটাতাম তখন মন সবসময় ফুরফুরা মেজাজ থাকতো। কিন্তু এখন ব্যস্ততা ও জীবনের পরিসরে মন সবসময় খারাপ হয়ে থাকে তাই এই মনকে ভালো করার জন্য আপনি খেলাধুলা করতে পারেন।

আপনি যদি ক্রিকেট খেলা ও ফুটবল খেলা পছন্দ করে থাকেন তাহলে আপনার মন ভাল করার সবচেয়ে ভালো পন্তা হতে পারে এটি কারণ খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষের মন সব সময় খুশি থাকে। তাই নিকটস্থ খেলার মাঠে প্রতিদিন বিকালে খেলতে যেতে পারেন।

প্রচন্ড মন খারাপ থাকলে কি করবেন

পানি পান করুন: যখন আপনার প্রচন্ড মন খারাপ হবে তখন আপনি নিজেকে ঠান্ডা করার জন্য এক গ্লাস পানি পান করুন। কথায় আছে গলার তৃষ্ণা যেমন পানির দ্বারা পূর্ণ হয়, তেমনি মনকে ঠান্ডা করার জন্য পানির গুরুত্ব অতুলনীয়। যখন প্রচন্ড মন খারাপ থাকবে তখন পানি পান করুন তাহলে মন খারাপ অনেকটাই কমে যাবে।

বাইরে ঘুরতে যান: মন খারাপের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ হলো বাইরে ঘুরতে যাওয়া এতে বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখলে মন অনেকটাই খুশি হয়ে যায় তাই নিজেকে ভালো রাখার জন্য হলেও প্রাকৃতিক পরিবেশে বাইরে যাওয়া অনেক প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার গ্রামের রাস্তা এবং মাঠের দিকে যেতে পারেন যেখানে মনোরম পরিবেশ ও সবসময় বাতাস বহে সেখানে যাওয়া উত্তম হবে।

কি খেলে মন ভালো থাকে

প্রত্যেকেরই সবার নিজ নিজ পছন্দ রয়েছে সেটা হোক খাবারের বিষয়ে সেটা হোক বা অন্য বিষয়ে তবে এখানে কি খেলে মন ভালো থাকে সেই বিষয়ে বলা মুশকিল তবে প্রত্যেকের উচিত নিজের পছন্দের খাবার খাওয়া।

আমরা অনেকেই রয়েছি নিজের পছন্দের খাবার খেলে মন ভালো হয়ে যায়। পেটের ক্ষুধা নিবারণের মাধ্যমেও মনকে ভালো করা যায়।

মন খারাপ থাকলে ইসলাম কি বলে

কোন নির্দিষ্ট কারণে মন খারাপ থাকলে সেটা অন্যভাবে দেখা যায়, তবে অনেক সময় কোন কারণ ছাড়াই মন খারাপ হয়ে যায় আর এই মন খারাপ নিয়ে ইসলাম কি বলে সে সম্পর্কে জানুন এখান থেকে।

কোন কারণ ছাড়া যেমন হাসি ইসলামের পছন্দ করে না তেমনি কোন কারণ ছাড়া ইসলামে মন খারাপের দিক দিয়ে সমর্থন করে না তবে এখানে কিছু বলা রয়েছে অনেক কারণে মন খারাপ হতে পারে, তবে যুক্তিগত কোনো কারণ থাকলে তাহলে নিজের মনকে ভালো করার উপায় খুঁজতে হবে। মন ভালো করার ক্ষেত্রে আপনি নিচের দেওয়া তিনটি উপদেশ মেনে চলতে পারেন।

একে অপরকে সালাম দেওয়া: একে অপরকে সালাম দেওয়ার মাধ্যমে নাকি অর্জন করা যায় তেমনি মন খারাপের সময় সালাম দেওয়ার মাধ্যমে মনকে ভালো করা যায়।

ইসলামের দৃষ্টিতে সেই ব্যক্তি উত্তম যে সবার আগে সালাম প্রদান করে, আর সবাই হাসিমুখে সালামের উত্তর দেয় তাই তাদের হাসিমুখ দেখলে আপনারও ভালো লাগবে। তাই বেশি বেশি সালাম প্রদান করুন।

হাসিমুখে কথা বলা: ইসলামের আরেকটি সৌন্দর্যের দিক হলো হাসিমুখে কথা বলা যখন মন খারাপ হয়ে যায় তখন মন অনেক ভার দেখা যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে সবসময় মুচকি হাসিতে সবার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ও প্রশ্ন করা উত্তম। তাই সব সময় হাসিমুখে কথা বলার চেষ্টা করুন।

ক্ষমা প্রার্থনা করা: আল্লাহর নিকট দোয়া চেয়ে প্রার্থনা করুন যেন আপনার মন সবসময় ভালো থাকে আমরা অনেকেই বিভিন্ন কারণে মন খারাপ করে থাকি এবং কখনো কখনো এই মন খারাপের কথা কাউকে বলা যায় না। তাই আপনি যখন নামাজ পড়েন তখন নামাজ শেষে আল্লাহর নিকট দুহাত বাড়িয়ে প্রার্থনা করুন যেন আপনার জীবন ভালোভাবে কাটে এবং কোন সময় মন খারাপ না হয়।

দোয়া ও জিকির করা: আল্লাহর নাম ও নবী রাসূল এর নাম জিকির করার মাধ্যমে মন খুশি হয়ে যায় তাই মনকে ভালো রাখতে বেশী বেশী দোয়া ও জিকির করুন। এছাড়াও ইসলামের দৃষ্টিতে দোয়া ও জিকির করা ব্যক্তি অবশ্যই সম্মাননি ব্যক্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে দোয়া ও জিকির করা ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অনেক প্রিয়।

Leave a Comment